কক্সবাজারে ভয়াল গুপ্তখাল-নিজে বাচুন অন্যকে সতর্ক করুন
জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। তবে অস্বাভাবিক
মৃত্যু বোধকরি কারোই কাম্য নয়। এবার কক্সবাজার গিয়ে গুপ্তখালের কবলে পরে
মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখলাম। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লেখবার
চেষ্টা করছি যা সকলের জানা উচিত।
কক্সবাজারে এই নিয়ে চতুর্থবার ভ্রমন হোল। সাম্প্রতি বিয়ের পরে এপ্রিল মাসে একবার গিয়েছিলাম। গত মাসে সস্ত্রীক দুই কাছের বন্ধু জয় এবং সাজ্জাদ
সহ বান্দারবনে গেলাম। সেখানে একদিন থাকার পরে নীলগিরী যাবার প্ল্যান ছিল।
কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ প্রধান সেই দিনই সেখানে যাওয়ায় নীলগিরী যাবার সব
পথ ছিল বন্ধ। তাই তড়িত সিদ্ধান্তে কক্সবাজার চলে এলাম। সেই দিন সন্ধ্যা
হয়ে যাওয়ায় আর পানিতে নামা হোল না। পরের দিন আবার বান্দারবনে যাব বলে
সকাল ৬ টার দিকে ২ নাম্বার সুগন্ধা পয়েন্টে নামলাম। মোট ৪ জনের গ্রুপ যার
মাঝে আমি একাই কেবল সাতার জানি না। সব কিছু ভালই চলছিল। প্রায় ১ ঘন্টা
পানিতে দাপাদাপির পর এল সেই বিশেষ মুহুর্ত। বন্ধু জয় হঠাত আবিষ্কার করল
একটু আগে যেখানে কোমর পানি ছিল তার ঠিক ডান দিকে যেতেই পুরো মাথা তলিয়ে
যাচ্ছে। ভোলায় বড় হওয়া জয় বিষয়টি বুঝতে পারে নাই সাতরে সে জায়গাটি
পার হয়ে যায় সাথে তার পিছু পিছু আরেক বন্ধু সাজ্জাদ ও পার হয়ে যায়।
আমিও ওদের কাছেই ছিলাম। একটু পর আমার স্ত্রীর চিতকার শুনতে পারলাম
যে-“আদনান আমাকে ধর আমি দাড়াতে পারছি না।“ আমি ভাবলাম কোমর পানিতে কি আর
হবে নিশ্চয়ই ব্যালেন্স করতে পারছে না। ওর কাছে এসে টেনে তুলে এক পা সামনে
আগাতেই অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ক্রমশ আমার পায়ের নিচে থেকে বালু সরেই
যাচ্ছে। ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যেই যেখানে আমার হাটু বরাবর পানির লেভেল ছিল তা
আমার মাথার উপরে উঠে গেল। অন্যদিকে আমার স্ত্রীর পরনে ছিল ফতুয়া, পায়জামা
আর ওড়না। সে সাতার জানে কিন্তু সেই মুহুর্তে তার পায়জামা আর ওরনা শরীরের
সাথে জড়িয়ে গেল। অন্যদিকে আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি সেখানে পানির লেভেল
আরো প্রায় ৬-১০ ইঞ্চি উপরে চলে যাওয়ায় আমি কোনমতেই শ্বাস নিতে পারছিলাম
না। বেশ কয়েকবার পানিতে ডুবছিলাম আর ভাসছিলাম কারন আমি বিন্দুমাত্র সাতার
জানি না। আমার বন্ধুদ্বয় সেই জায়গাটা পার হবার সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছিল
আমরা এদিকে আসলে বিপদে পরতে পারব তাই জায়গাটা সাতরে পার হয়ে আমাদের
সতর্ক করার জন্য মুখ ঘুড়িয়েই দেখে আমি পানিতে ডুবছি আর ভাসছি। এরই মধ্যে
প্রথমবার ডুব খাবার সাথে সাথেই জীবনের ভয়ংকরতম ভয় পেলাম। আমার মনে হচ্ছিল
মৃত্যু অবধারিত। সাথে সাথে আবিদের মৃত্যুর কথা মনে পড়ায় আরো বেশী
প্যানিক হয়ে গেলাম। আমি এই পানি খাওয়া আর বার বার ডুবে যাওয়ার মধ্যেই
প্রায় ৩-৪ বার আমার বন্ধুর নাম ধরে জোরে জোরে ডাকলাম আর তীরের দিকে হাত
উঠিয়ে সাহায্যের আশায় হাত নাড়ছিলাম। সেই সময় মনে হচ্ছিল আমার চিতকার
বুঝি কেউ শুনছে না আর এতো সকালবেলাকেউ হয়তো আমাদের খেয়ালো করছে না। আর
আমার স্ত্রী কাপরে জট লাগিয়ে সাতার পারা সত্বেও ক্রমাগত পানি খাচ্ছিল।
আমাদের এই অবস্থা দেখে ভাল সাতার পারা বন্ধু জয় দ্রুত আমার স্ত্রীর কাছে
আসতে থাকে আর আরেক বন্ধু সাজ্জাদ তীরের লাইফ গার্ডদের দৃষ্টি আকর্ষন করে
দ্রুত আমাদের উদ্ধার করতে অনুরোধ করতে থাকে। আমাদের বেহাল অবস্থা বুঝতে
পেরে একজন ফটোগ্রাফার দ্রুত তীরে তার ক্যামেরা রেখে পানিতে ঝাপিয়ে পরে
আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে, কর্তব্যরত লাইফ গার্ডদের একজন সার্ফিং বোর্ড
নিয়েও দ্রুত নেমে যায় আর একটি কিশোর ছেলে আমাকে উদ্ধার করে। আল্লাহর
রহমতে খুব দ্রুত পায়ের নিচে মাটি খুজে পাওয়ায় ক্রমাগত পানি খাওয়া থেকে
দুইজনই রক্ষা পাই।
উদ্ধার পাবার পর লাইফ গার্ডের প্রথম
প্রশ্ন ছিল এইদিকে গেলেন কেন? জানেন না এদিকে গুপ্তখাল আছে? পেপার
পত্রিকায় এতোদিন সাগরের নিরব ঘাতক এইসব গুপ্তখালের কবলে পরে পর্যটকের
মৃত্যুর খবর জেনেছি সেই দিন নিজে এর শিকার হয়ে এর ভয়াবহতাটুকু মর্মে
মর্মে উপলদ্ধি করলাম। এ এমন এক অভিজ্ঞতা যা থেকে সবাইকে সতর্ক না করলেই
নয়।
No comments:
Post a Comment